পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধির চিকিৎসা

পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধির চিকিৎসা

পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি কি ও কেন হয় ?

পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি যাকে ( ক্যালকেনিয়াল স্পোরও) বলা হয়, এটি সাধারণ একটি অবস্থা যা বয়স্ক মানুষের হয়ে থাকে,  (৪০ বছরের বেশি বয়সী লোকেদের মধ্যে বেশি দেখা যায়)। যখন গোড়ালির হাড়ের নিচে বা পেছনে ক্যালসিয়াম জমা হয় তখন পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি পায় । এর ফলে পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা, ফোলাভাব এবং অস্বস্তি সৃষ্টি হতে পারে। পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধির চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নিন।

পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধির চিকিৎসা

পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধির চিকিৎসার লক্ষ্য হল ব্যথা এবং অস্বস্তি ভাব কমানো এবং গোড়ালির স্বাভাবিক কার্যকারিতা পুনরায় ফিরিয়ে আনা । পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধির চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:

বরফ দেয়া : বরফ ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে। বরফের টুকরোগুলিকে তোয়ালেতে মুড়ে নিন এবং আপনার গোড়ালির উপর ১৫-২০ মিনিট সময় এর জন্য দিনে ৪-৫ বার প্রয়োগ করুন।

উচ্চতায় রাখা: আপনার পায়ের গোড়ালি উঁচুতে রাখলে ব্যথা এবং পা ফোলা কমতে পারে। আপনার গোড়ালির নীচে একটি বা দুটি বালিশ রাখুন , আপনার পায়ের পাতা একটি উঁচু চেয়ারে রাখুন।

আরও জানুনঃ ঘন ঘন প্রসাব কি কারনে হয়

ফিজিওথেরাপি

 ফিজিওথেরাপি পেশী শক্তি এবং ভারসাম্য উন্নত করতে সাহায্য করে। ফিজিওথেরাপিস্ট আপনাকে প্রয়োজনীয় ব্যায়াম এবং অন্যান্য নিয়মগুলি শিখিয়ে দিতে পারেন যা আপনার গোড়ালির কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়তা করবে।

সার্জারি

সার্জারি করার সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র তখনই নেয়া হয় যখন অন্যান্য চিকিৎসা ব্যর্থ হয় বা ব্যথা খুব তীব্র হয়। সার্জারির বিভিন্ন ধরন রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

এন্ডোস্কোপিক : এন্ডোস্কোপিক সার্জারিতে, ছোট ছিদ্র দিয়ে একটি ক্যামেরা এবং সরঞ্জাম প্রবেশ করানো হয়। এই পদ্ধতিটি সাধারণত কম আক্রমণাত্মক এবং দ্রুত পুনরুদ্ধারের জন্য করা হয়ে থাকে।

অ্যাপারচার : অ্যাপারচার সার্জারিতে, বড় করে কেটে হাড়ের বৃদ্ধি অপসারণ করা হয়। এই পদ্ধতিটি আরও আক্রমণাত্মক এবং পুনরুদ্ধারের ।

পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধির চিকিৎসার জন্য কোন একক সেরা পদ্ধতি নেই। আপনার নির্দিষ্ট লক্ষণ এবং অবস্থার উপর নির্ভর করে , আপনার ডাক্তার আপনার জন্য সেরা চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করতে সহায়তা করতে পছিকিতস

পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধির হোমিও চিকিৎসা

হোমিওপ্যাথি একটি প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি। হোমিওপ্যাথিক ওষুধগুলি এমনভাবে তৈরি করা হয় যা প্রকৃতিতে পাওয়া যায় এমন পদার্থ থেকে তৈরি করা হয়। এই ওষুধগুলি খুবই মিশ্রিত হয় এবং খুব কম মাত্রায় দেওয়া হয়।

হোমিওপ্যাথি পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধির চিকিৎসায় কার্যকর হতে পারে। হোমিওপ্যাথিক ওষুধগুলি ব্যথা, প্রদাহ এবং গোড়ালির কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।

হাড় বৃদ্ধির হোমিও ঔষধ 

পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধির জন্য হোমিওপ্যাথিক ওষুধগুলির মধ্যে রয়েছে:

আর্নিকা মন্টানা: এটি ব্যথা এবং প্রদাহের জন্য একটি কার্যকর হোমিওপ্যাথিক ওষুধ। এটি সাধারণত তীব্র, তীব্র ব্যথার জন্য ব্যবহৃত হয় যা ধাক্কা বা আঘাতের কারণে হয়।

রিউস টক্স: এটি ব্যথা, প্রদাহ এবং গোড়ালি মজবুত করার জন্য একটি কার্যকর হোমিওপ্যাথিক ওষুধ। 

ব্রায়োনিয়া অ্যালব: এটি ব্যথা এবং প্রদাহের জন্য একটি কার্যকর হোমিওপ্যাথিক ওষুধ। এটি সাধারণত তীব্র, তীব্র ব্যথার জন্য ব্যবহৃত হয় ।

হিপারিকাম পারফুরাম: এটি ব্যথা এবং প্রদাহের জন্য একটি কার্যকর হোমিওপ্যাথিক ওষুধ। এটি সাধারণত তীব্র, তীব্র ব্যথার জন্য ব্যবহৃত হয় ।

হোমিওপ্যাথিক ওষুধ নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ যা আপনার নির্দিষ্ট লক্ষণগুলির জন্য উপযুক্ত। আপনার চিকিৎসক আপনাকে আপনার জন্য সেরা ওষুধ নির্বাচন করতে সাহায্য করতে পারেন।

হোমিওপ্যাথিক ওষুধগুলি সাধারণত মুখের মাধ্যমে ট্যাবলেট, ক্যাপসুল বা দ্রবণ আকারে নেওয়া হয়। ওষুধগুলি সাধারণত প্রতিদিন এক থেকে তিনবার নেওয়া হয়।

হোমিওপ্যাথিক ওষুধগুলি সাধারণত নিরাপদ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই হয়। তবে, যদি আপনি কোনও নতুন ওষুধ শুরু করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ।

পায়ের গোড়ালির হাড় বাড়ে কেন ?

পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধির সঠিক কারণ অজানা, তবে কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:

গোড়ালিতে অতিরিক্ত চাপ: গোড়ালিতে অতিরিক্ত চাপ বা আঘাত ক্যালসিয়াম জমার কারণ হতে পারে। এটি দীর্ঘ দূরত্ব হাঁটা, ভারী জিনিসপত্র বহন করা বা অ্যাথলেটিক আঘাতের কারণে হতে পারে।

বয়স: বয়স বাড়ার সাথে সাথে, হাড় দুর্বল হতে পারে এবং ক্যালসিয়াম জমার ঝুঁকি বাড়ে।

অস্টিওআর্থারাইটিস: কিছু রোগ, যেমন অস্টিওআর্থারাইটিস বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়ায়।

জিনগত কারণ: কিছু লোকের অন্যান্যদের তুলনায় পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধির ঝুঁকি বেশি থাকে।

পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধির লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • হাঁটার সময় পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা ।
  • পায়ের গোড়ালির ফোলাভাব।

পায়ের হাড় কেন বাড়ে?

পায়ের হাড় বৃদ্ধির বিভিন্ন ধরন রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হল ক্যালকেনিয়াল স্পোর, যা পায়ের গোড়ালির হাড়ের নিচে বা পেছনে ক্যালসিয়াম জমার কারণে ঘটে। অন্যান্য ধরণের পায়ের হাড় বৃদ্ধি হল:

টেন্ডন স্পোর: টেন্ডন  পেশীকে হাড়ের সাথে সংযুক্তকারী এক তন্তু। টেন্ডন স্পোরা টেন্ডনে ক্যালসিয়াম জমার কারণে ঘটে।

অ্যার্থ্রাইটিক নোড: আর্থ্রাইটিস এমন এক রোগ যা জয়েন্টগুলিকে প্রভাবিত করে। আর্থ্রাইটিক নোড , আর্থ্রাইটিসের কারণে জয়েন্টগুলিতে ক্যালসিয়াম জমার কারণে ঘটে।

পায়ের হাড় বৃদ্ধি সাধারণত গুরুতর হয় না। তবে, এটি ব্যথা এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। যদি আপনার পায়ের হাড় বৃদ্ধির লক্ষণ থাকে, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।

হাড় বেড়ে যাওয়ার প্রতিরোধ

হাড় বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমাতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে:

সঠিক ওজন বজায় রাখা: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা হাড়ের উপর চাপ বাড়ায়, যা হাড় বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি গ্রহণ করা: ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি গ্রহণ  করতে হবে।

নিয়মিত ব্যায়াম করা: নিয়মিত ব্যায়াম হাড়ের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

হাড় বৃদ্ধির খাবার

হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ  উপাদান। ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠন এবং খনিজকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ও ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে।

হাড় বৃদ্ধির জন্য অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম ,ফসফরাস ,জিঙ্ক ইত্যাদি ।

প্রোটিন: প্রোটিন হাড়ের টিস্যুর জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় প্রোটিন রাখুন ।
ম্যাগনেসিয়াম: ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের গঠন এবং পুনর্জন্মে সহায়তা করে।প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় ম্যাগনেসিয়াম রাখুন।
ফসফরাস: ফসফরাস হাড়ের গঠন এবং শক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় ফসফরাস রাখুন।
জিঙ্ক: জিঙ্ক হাড়ের বৃদ্ধি এবং মেরামতে সহায়তা করে।প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় জিঙ্ক রাখুন।

হাড় বৃদ্ধির জন্য আরও কিছু  খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • দুগ্ধজাত খাবার: দুধ, দই, পনির, ছানা ইত্যাদি দুগ্ধজাত খাবারগুলি ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে ভালো উৎস।
  • সয়া পণ্য: সয়া পণ্যগুলিও ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস।
  • বাদাম এবং বীজ: বাদাম এবং বীজগুলি ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাসের ভালো উৎস।
  • সবুজ শাকসবজি: সবুজ শাকসবজি ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের ভালো উৎস।
  • টক ফল: টক ফল ভিটামিন সি এবং ফোলেট এর ভালো উৎস। ভিটামিন সি হাড়ের কোলাজেন সংশ্লেষণে সহায়তা করে, যা হাড়ের শক্তি এবং স্থিতিস্থাপকতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

হাড় বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এই খাবারগুলি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।এছাড়াও, নিয়মিত ব্যায়াম হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়াম হাড়ের ঘনত্ব এবং শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।হাড় বেড়ে যাওয়া একটি সাধারণ অবস্থা যা প্রায়শই বেদনাদায়ক হতে পারে। তবে, সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে, লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করা এবং হাড়ের স্বাভাবিক কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।

সাধারণ জিজ্ঞাসাঃ

গোড়ালির হাড়ের নাম কি?

গোড়ালি তিনটি হাড় নিয়ে গঠিত - টিবিয়া, ফিবুলাএবং তালুস ।

হাড় বৃদ্ধির কারণ কি?

অতিরিক্ত চাপ, বয়স ,জিনগত কারণ ইত্যাদি।

1 thought on “পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধির চিকিৎসা”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top