প্যারালাইসিস হলে করনীয় কি?

প্যারালাইসিস হলে করনীয়

প্যারালাইসিস রোগীর চিকিৎসা , প্যারালাইসিস এর ওষুধ এসকল বিষয় নিয়ে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করব।প্যারালাইসিস হলে করনীয় কি তা আমাদের জানতে হবে।

প্যারালাইসিস হল শরীরের এক বা একাধিক অংশের পেশির কার্যকারিতা হ্রাস বা সম্পূর্ণ ক্ষতি। প্যারালাইসিসের অনেকগুলি কারণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

মস্তিষ্কের ক্ষতি: মস্তিষ্ক হল শরীরের সমস্ত পেশির কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে এমন স্নায়ু। যদি মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে  পেশিকে সংকেত পাঠাতে ব্যর্থ হয়। এটি প্যারালাইসিসের দিকে ধাবিত করতে পারে।

মেরুদণ্ডের ক্ষতি: যদি মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে এটি স্নায়ুগুলিকে আঘাত করতে পারে এবং শরীরের অন্যান্য অংশে সংকেত পাঠাতে ব্যর্থ হয়।যা প্যারালাইসিসের দিকে ধাবিত করতে পারে।

পেশির ক্ষতি: পেশির ক্ষতি পেশির কার্যকারিতা হ্রাস  করতে পারে। এটি প্যারালাইসিসের দিকে ধাবিত করতে পারে।

প্যারালাইসিসের সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

পেশির দুর্বলতা বা অসাড়তাঃপ্যারালাইসিসের ফলে পেশি দুর্বল হয়ে যায়।

পেশির টান বা সংকোচনঃ পেশির টান বা সংকোচন প্যারালাইসিসের প্রধান একটি লক্ষণ।

এগুলা ছাড়াও প্যারালাইসিস হলে রোগীর মধ্যে আরও অনেক দেখা যায়।

আরও জানুনঃ ঘন ঘন প্রসাব কি কারনে হয় 

প্যারালাইসিস হলে করনীয় কি ?

প্যারালাইসিস একটি জটিল রোগ যা রোগীর জীবনযাত্রাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।প্যারালাইসিস হলে করনীয় তা আমাদের জানতে হবে। তাই, প্যারালাইসিস হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা উচিত।

প্যারালাইসিস হলে করনীয় কিছু বিষয় হল

  • যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একজন ডাক্তারের কাছে যান। প্যারালাইসিসের কারণ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসা শুরু করা গুরুত্বপূর্ণ।
  • আপনার ডাক্তারের সাথে আপনার চিকিৎসা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করুন। চিকিৎসার মধ্যে ঔষধ, ফিজিওথেরাপি, অস্ত্রোপচার ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
  • আপনার পুনর্বাসন পরিকল্পনা মেনে চলুন। পুনর্বাসন হল প্যারালাইসিস থেকে সেরে উঠার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
  • আপনার শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। প্যারালাইসিস থেকে সেরে উঠতে শারীরিক এবং মানসিক উভয় স্বাস্থ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
  • আপনার সম্প্রদায়ের মধ্যে মেলামেশা করুন। অন্যান্য প্যারালাইসিস রোগীদের সাথে যোগাযোগ করলে আপনি সামাজিক এবং মানসিক সমর্থন পেতে পারেন।

প্যারালাইসিস রোগীদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট পরামর্শ হল

  • আপনার শরীরের অবস্থা সম্পর্কে সচেতন থাকুন। প্যারালাইসিসের কারণে সৃষ্ট যেকোনো সমস্যার লক্ষণগুলি সনাক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।
  • নিরাপদ থাকুন। প্যারালাইসিস আপনার চলাচলকে প্রভাবিত করতে পারে, তাই আপনার চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং সাবধানে চলাচল করুন।  

প্যারালাইসিস রোগীর চিকিৎসা

প্যারালাইসিস রোগীর চিকিৎসা নির্ভর করে প্যারালাইসিসের কারণ এবং তীব্রতার উপর। চিকিৎসার মধ্যে ঔষধ, ফিজিওথেরাপি, অস্ত্রোপচার, বা অন্য কোনও চিকিৎসা পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

ঔষধ

প্যারালাইসিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ঔষধের মধ্যে রয়েছে:

  • স্ট্রোকের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ
  • মেরুদণ্ডের আঘাতের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ
  • স্নায়বিক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ

ফিজিওথেরাপি

প্যারালাইসিস রোগীর জন্য ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফিজিওথেরাপিস্ট প্যারালাইসড অঙ্গের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, ব্যথা এবং খিঁচুনী কমাতে, এবং রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করেন।

প্যারালাইসিস রোগীদের জন্য ব্যায়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়াম প্যারালাইসড অঙ্গের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, ব্যথা এবং খিঁচুনী কমাতে, এবং রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে।

প্যারালাইসিস রোগীদের জন্য ব্যায়াম বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। কিছু সাধারণ ব্যায়াম হল:

অঙ্গের নড়াচড়া: এই ব্যায়ামে প্যারালাইসড অঙ্গকে সক্রিয়ভাবে নড়াচড়া করানো হয়। এটি মাংসপেশির শক্তি এবং নমনীয়তা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

পেশী সংকোচন: এই ব্যায়ামে প্যারালাইসড অঙ্গের মাংসপেশীকে সংকুচিত করা হয়। এটি মাংসপেশির শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

ভারসাম্য এবং সমন্বয়: এই ব্যায়ামে প্যারালাইসড রোগীকে ভারসাম্য বজায় রাখার এবং বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করার জন্য সমন্বয় করতে সাহায্য করা হয়।

সঞ্চালন: এই ব্যায়ামে প্যারালাইসড অঙ্গের রক্ত ​​সঞ্চালন উন্নত করার জন্য কাজ করা হয়। এটি ফোলাভাব এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

প্যারালাইসিস রোগীদের জন্য ব্যায়াম শুরু করার আগে একজন ফিজিওথেরাপিস্টের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ। 

প্যারালাইসিস রোগীদের জন্য ব্যায়াম নিরাপদ এবং কার্যকর করতে কিছু টিপস হল

  • ব্যায়াম শুরু করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
  • ব্যায়াম করার সময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
  • ব্যায়াম করার পরে আপনার পেশীগুলিকে ঠান্ডা রাখুন।

নিয়মিত ব্যায়াম প্যারালাইসিস রোগীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।

অস্ত্রোপচার

কিছু ক্ষেত্রে, প্যারালাইসিসের চিকিৎসায় অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্যারালাইসড অঙ্গের ক্ষতিগ্রস্ত অংশকে মজবুত ও প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে।

অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি

প্যারালাইসিস রোগীর জন্য অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিও উপকারী হতে পারে। যেমন:

  • ইলেক্ট্রোথেরাপি
  • ম্যাগনেটোথেরাপি
  • বিজ্ঞানভিত্তিক থেরাপি

প্যারালাইসিস রোগীর চিকিৎসায় , রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে, চিকিৎসার মধ্যে ঔষধ, ফিজিওথেরাপি, অস্ত্রোপচার, বা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি সমন্বিতভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্যারালাইসিস রোগীর চিকিৎসার লক্ষ্য হল প্যারালাইসড অঙ্গের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।

Balance diet
প্যারালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা তৈরি করতে আপনাকে জেনে নিতে হবে প্যারালাইসিস রোগীর কি ধরণের খাবার খেতে হবে। তা নিম্নরুপঃ

  •  শাকসবজি প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখবেন ।
  •  আঙ্গুর, আম, আপেল ইত্যাদি ফল ।
  • উচ্চ ফাইবার যুক্ত খাবার  যেমন রুটি, ভাত, পাস্তা এবং ওটস  ইত্যাদি
  • চর্বিহীন মাংস , হাঁস, মাছ, ডিম ইত্যাদি
  • বাদাম, বীজ, মটরশুটি ইত্যাদি
  • দুধ, দই, পনির ইত্যাদি
  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা ।

প্যারালাইসিস এর ওষুধ

প্যারালাইসিস একটি জটিল রোগ যার কোন একক চিকিৎসা নেই। প্যারালাইসিসের কারণ অনুসারে চিকিৎসার পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়।
স্ট্রোকের কারণে প্যারালাইসিস হলেঃ স্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর ফিজিওথেরাপি দিয়ে প্যারালাইসড অঙ্গের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়। ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে রোগীকে আক্রান্ত অঙ্গের নড়াচড়া শিখতে সাহায্য করা হয়। এছাড়াও, ঔষধ দিয়ে প্যারালাইসিসের লক্ষণগুলি যেমন ব্যথা, জ্বালাপোড়া, খিঁচুনী ইত্যাদি উপশম করা হয়।
মেরুদণ্ডের আঘাতের কারণে প্যারালাইসিস হলেঃ আঘাতের ধরন ও তীব্রতার উপর নির্ভর করে চিকিৎসার পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়। হালকা আঘাতের ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি দিয়ে প্যারালাইসড অঙ্গের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়। তবে, মাঝারি বা গুরুতর আঘাতের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আঘাতপ্রাপ্ত মেরুদণ্ডের অংশ পুনর্গঠন করা হয়। এছাড়াও, ঔষধ দিয়ে প্যারালাইসিসের লক্ষণগুলি যেমন ব্যথা, জ্বালাপোড়া, খিঁচুনী ইত্যাদি উপশম করা হয়।

প্যারালাইসিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ঔষধের মধ্যে রয়েছে

ব্যথানাশক ঔষধ: প্যারালাইসিসযুক্ত অঙ্গের ব্যথা, জ্বালাপোড়া, খিঁচুনী ইত্যাদি উপশম করার জন্য ব্যথানাশক ঔষধ ব্যবহার করা হয়।
মৃগীর ঔষধ: প্যারালাইসিসের কারণে খিঁচুনী হলে মৃগীর ঔষধ ব্যবহার করা হয়।

সাধারণ জিজ্ঞাসাঃ

প্যারালাইসিস হলে কি সমস্যা হয়?

প্যারালাইসিস হল একটি শারীরিক অবস্থা যাতে মাংসপেশী স্বাভাবিক কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে দুর্বল বা শিথিল হয়ে থাকে। এতে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অচল হয়ে পঙ্গুতের মত অবস্থা হতে পারে। প্যারালাইসিস একটি গুরুতর অবস্থা যা জীবনের গুণমানকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

৫ প্রকার প্যারালাইসিস কি কি?

প্যারালাইসিস ৫ প্রকার। এগুলো হলঃমনোপ্লেজিয়া, হেমিপ্লেজিয়া, প্যারাপ্লেজিয়া এবং কোয়াড্রিপ্লেজিয়া।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top