মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ কি । ঘন ঘন প্রসাব হলে করনীয়

মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ

মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ কি , মেয়েদের ঘন ঘন প্রসাব হলে করনীয় , রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ , ঘন ঘন প্রসাব থেকে মুক্তির ঔষধ , পুরুষের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ  ইত্যাদি এসকল বিষয় নিয়ে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করব।

মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ

মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার অনেকগুলি সম্ভাব্য কারণ রয়েছে। সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিস এক ধরণের মেটাবলিক ডিসঅর্ডার যা রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের মূত্রত্যাগের প্রয়োজন বেশি হতে পারে, কারণ তাদের শরীর অতিরিক্ত তরল ত্যাগ করে।

মূত্রনালীর সংক্রমণ (ইউটিআই): ইউটিআই হল মূত্রনালীর সংক্রমণ যা ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে। ইউটিআই মহিলাদের একটি সাধারণ সমস্যা, যা ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার একটি অন্যতম কারণ।

গর্ভবতী মহিলা: গর্ভাবস্থায় মহিলাদের মূত্রাশয়ের উপর চাপ বেড়ে যায়। যার কারণে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে।

কিডনি রোগ: কিডনি রোগ হলে  ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে।

স্নায়বিক সমস্যা: স্নায়বিক সমস্যা হলে  ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে। যেমনঃ মাল্টিপল স্কেরোসিস।

অ্যালকোহল বা ক্যাফেইন গ্রহণ: অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন মূত্রবর্ধক তরল , যার অর্থ এগুলি প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ায়।অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন গ্রহণের ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়।

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যেমন ডাইইউরেটিকস এবং কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ায়।

যদি আপনার ঘন ঘন প্রস্রাব হয়, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ । আপনার ডাক্তার আপনার লক্ষণগুলির ইতিহাস এবং আপনার শারীরিক পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে আপনার ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ নির্ণয় করতে পারেন।

মেয়েদের ঘন ঘন প্রসাব হলে করনীয়

মেয়েদের ঘন ঘন প্রসাব হওয়ার সমস্যা হলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি লক্ষ্য রাখা যেতে পারে:

অতিরিক্ত পানি পান থেকে বিরত থাকা : পানি পান কমিয়ে প্রস্রাবের পরিমাণ কমানো যেতে পারে। তবে, পানিশূন্যতা এড়াতে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল পান করা উচিত।

আরও জানুনঃ ঘন ঘন প্রসাব কি কারনে হয়

ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এবং অ্যালকোহল এড়ানো: ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এবং অ্যালকোহল প্রস্রাবের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়াতে পারে। তাই, এই ধরনের পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকুন ।

নিয়মিত ব্যায়াম করা: নিয়মিত ব্যায়াম হজম প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তাই, নিয়মিত ব্যায়াম করলে ঘন ঘন প্রসাব হওয়ার সমস্যা কমাতে পারে ।

এছাড়াও, ঘন ঘন প্রসাব হওয়ার সমস্যার সাথে অন্যান্য উপসর্গ, যেমন প্রস্রাব জ্বালাপোড়া, প্রস্রাবে রক্ত, ইত্যাদি দেখা দিলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। কারণ, এটি অন্য কোনো রোগের লক্ষণ হতে পারে।

মেয়েদের ঘন ঘন প্রসাব হওয়ার সমস্যায় কিছু ঘরোয়া প্রতিকার

পেলভিক ফ্লোর ব্যায়াম: পেলভিক ফ্লোর ব্যায়াম মূত্রাশয়ের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এটি ঘন ঘন প্রসাব হওয়ার সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

Pelvic floor exercises

ইলাস্টিক বেল ব্যবহার: ইলাস্টিক বেল ব্যবহার করে পেলভিক ফ্লোর ব্যায়াম করা যেতে পারে।

elastic bell

কফিনযুক্ত পানীয় বর্জন করা: কফিনযুক্ত পানীয়ের পরিবর্তে চা, লেবুর পানি বা অন্যান্য তরল পান করা যেতে পারে।

এগুলি ছাড়াও, মেয়েদের ঘন ঘন প্রসাব হওয়ার সমস্যার কারণ নির্ণয় করে তার চিকিৎসা করা হলে সমস্যাটি সমাধান করা যেতে পারে।

মেয়েদের ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ হলে যা খাবেন

মেয়েদের ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ হলে যা খাবেন:

আঁশযুক্ত খাবার খাবেন: আঁশযুক্ত খাবার হজমে সাহায্য করে। তাই, ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ কমাতে হলে প্রচুর পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। যেমনঃ ফল, শাকসবজি, ওটস ইত্যাদি।

প্রোটিনযুক্ত খাবার খাবেন: প্রোটিন মূত্রাশয়ের সংকোচনকে কমাতে সাহায্য করে। তাই, ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ কমাতে  প্রচুর পরিমাণে প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া খান। যেমনঃ মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি।

রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ

রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণকে নকচারিয়া বলা হয়ে থাকে। একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির রাতে ঘুমের মধ্যে অন্তত দুইবার প্রস্রাব করলে তাকে নকচারিয়া বলা হয়। যেকোনো বয়সেই এটি হতে পারে , তবে এই সমস্যাটি বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার অনেকগুলি কারণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

স্বাভাবিক কারণে প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া : রাতে ঘুমের মধ্যে শরীরে প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পায়। এটি শরীরের পানিশূন্যতা রোধ করতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত পানি পান, ক্যাফিন বা অ্যালকোহল গ্রহণ করলে প্রস্রাবের পরিমাণ আরও বেশি বেড়ে যেতে পারে।

মূত্রনালীর প্রদাহ: মূত্রনালীর প্রদাহ হলে প্রস্রাবের বেগ ও পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে।

কিডনি রোগ: কিডনি রোগীদের প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।

গর্ভাবস্থায়: গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পায়।

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে।

ঘন ঘন প্রসাব থেকে মুক্তির ঔষধ

ঘন ঘন প্রসাব থেকে মুক্তির জন্য অনেক ধরনের ঔষধ রয়েছে। এই ঔষধগুলির মধ্যে রয়েছে:

অ্যান্টিকোলিনার্জিকস: অ্যান্টিকোলিনার্জিকস মূত্রাশয়ের সংকোচনকে হ্রাস করতে সাহায্য করে। এটি প্রস্রাবের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।

ইন্ডোমেথাসিন: ইন্ডোমেথাসিন একটি প্রদাহ-বিরোধী ঔষধ। এটি মূত্রনালীর সংক্রমণের কারণে ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ঘন ঘন প্রসাব থেকে মুক্তির জন্য কোন ঔষধটি সবচেয়ে উপযুক্ত তা নির্ভর করে আপনার সমস্যার কারণ এবং তীব্রতার উপর। তাই, আপনার সমস্যার কারণ নির্ণয়ের জন্য একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। চিকিৎসক আপনার সমস্যার কারণ নির্ণয় করে তার উপযুক্ত চিকিৎসা দেবেন।

পুরুষের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ

পুরুষের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। এটি একটি সাধারণ সমস্যা, তবে এটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণও হতে পারে। তাই যদি আপনি ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যায় ভোগেন তবে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।

পুরুষের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার সাধারণ কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

প্রোস্টেট গ্রন্থির সমস্যা: প্রোস্টেট গ্রন্থি পুরুষদের মূত্রথলির চারপাশে অবস্থিত একটি ছোট গ্রন্থি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বা অন্যান্য কারণে প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে গেলে এটি মূত্রনালীকে সংকুচিত করে, যার ফলে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায় এবং ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে।

মূত্রনালীর সংক্রমণ: মূত্রনালীর সংক্রমণ (ইউটিআই) মূত্রনালীর যেকোনো অংশে সংক্রমণের কারণে ঘটে। ইউটিআই-এর একটি সাধারণ লক্ষণ হল ঘন ঘন প্রস্রাব।

অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা: অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন হার্ট ফেইলিউর, হাইপোথাইরয়েডিজম, এবং মানসিক চাপও ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে।

সাধারণ জিজ্ঞাসাঃ

মহিলাদের দিনে কতবার প্রসাব করা উচিত?

সাধারণত, একজন পূর্ণবয়স্ক মহিলা ২৪ ঘণ্টায় দুই থেকে তিন লিটার প্রস্রাব করেন। তবে, এই পরিমাণ পরিবেশগত অবস্থার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। যেমন, গরম আবহাওয়ায় ঘামের পরিমাণ বেশি হয়, তাই প্রস্রাবের পরিমাণও বেশি হয়।

কত ঘন্টা পর পর প্রস্রাব হওয়া উচিত?

সাধারণভাবে, একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি দিনে চার থেকে আটবার প্রস্রাব করে থাকেন। অর্থাৎ, প্রতি ৯০ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টায় একবার প্রস্রাব করা স্বাভাবিক। তবে, ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। যেমন, গর্ভবতী নারীদের প্রস্রাব করার প্রবণতা বেশি থাকে, তাই তারা দিনে ১০ থেকে ১২ বারও প্রস্রাব করতে পারেন।

ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ কী ?

ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:পানি পানের পরিমাণ বৃদ্ধি, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি,ব্যায়াম,ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top