কোমর ব্যথার কারণ ও প্রতিকার

কোমর ব্যথার কারণ

কোমর ব্যথা কি?

সহজ ভাষায় মেরুদন্ডের পেছনের অংশের ব্যথাকে কোমর ব্যথা বলে। প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে কোমর ব্যথায় ভুগে থাকেন।

কোমর ব্যথার কারণ

  • পিএলআইডি: এটি কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ। এটি সাধারণত ২৫ থেকে ৪০ বছরের মানুষের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে।
  • মেরুদন্ডের মাংস পেশির প্রসারণ, মচকানো বা আংশিক ছিড়ে যাওয়ার কারণে কোমর ব্যথা হয়।
  •  বর্তমান সময়ে কোমর ব্যথার গুরত্বপূর্ণ একটি কারণ হলো অতিরিক্ত  ওজন।
  •  যক্ষা, অস্টিওপোরোসিস, দীর্ঘকাল স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবনের ইতিহাস থাকলে কোমর ব্যথা হতে পারে।
  • মহিলাদের কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ হলো প্রেগনেন্সি বা গর্ভধারণ।

কোমর ব্যথার লক্ষণ

  • কোমর ব্যথার কারণে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে অসুবিধা হবে।
  • প্রথমে কোমর ব্যথা কম মনে হলেও আস্তে আস্তে তা বাড়তে থাকবে।
  • পা ঝিনঝিন করবে।
  • ব্যথা কোমর থেকে নিচের দিকে নামতে থাকবে।
  • কোমর ব্যথায় পা অবশ অবশ লাগবে।
  • কোমর ব্যথার কারণে জ্বর আসতে পারে।
  • প্রসাব ধরে রাখতে অসুবিধা হতে পারে।
  • মাংসপেশি শক্ত হয়ে যেতে পারে।
  • দেহের ওজন কমে যাবে।
কোমর ব্যথার প্রতিকার
কোমর ব্যথার চিকিৎসা

কোমর ব্যথার চিকিৎসা

রোগ নির্ণয়:

যে কোন চিকিৎসার জন্য রোগ নির্ণয় অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ বিষয়। ঠিক তেমনি কোমর ব্যথার জন্য তার কারণ অনুসন্ধান খুবই প্রয়োজন। তাই কোমর ব্যথার জন্য নিম্নোক্ত পরীক্ষাগুলো করা হয়।

  • এক্সরে ও এমআরআই করা হয়।
  • ফরওয়ার্ড বেন্ডিং ও ব্যাকওয়ার্ড বেন্ডিং পরীক্ষা করা হয়।
  • ক্যালসিয়াম, ইউরিক এসিড প্রভৃতি রক্তের পরীক্ষা করা হয়।

কোমর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি:

  • সামনের দিকে ঝুকে কাজ করবেন না।
  • শক্ত ও সমান বিছানা ব্যবহার করবেন।
  • অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে।
  • ঘুমানোর সময় সোজা হয়ে ঘুমাতে হবে।
  • ঘুম থেকে উঠার সময় এক কাত হয়ে ঘুম থেকে উঠবেন।
  • একইভাবে দীর্ঘক্ষণ বসে অথবা দাড়িয়ে কাজ করবেন না।
  • বুকের নিচে একটি বা দুটি বালিশ দিয়ে দিনে দশ মিনিট করে দুবার উপুর হয়ে শুয়ে এক সপ্তাহ দেখতে পারেন।
  • তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনি একজন নিকোটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কোমর ব্যথার ঔষধ:

আপনার কোমর ব্যথার উপর নির্ভর করে, চিকিৎসক আপনাকে  বিভিন্ন ঔষধ দিতে পারেন। তার মধ্যে  ইবুপ্রোফেন বা ন্যাপ্রক্সেন সোডিয়াম অন্যতম, যা পিঠের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে । এ ওষুধসমূহ শুধুমাত্র আপনার ডাক্তারের নির্দেশ অনুসারে নিতে হবে। ঔষধের অতিরিক্ত ব্যবহার মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই ‍যতসম্ভব ব্যথার ঔষধ পরিহার করা উচিত।

কোমর ব্যথার কার্যকারী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা:

কোমড় ব্যথার অন্যতম কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি হল ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতি। কারণ এ চিকিৎসায় কোন প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এ চিকিৎসা পদ্ধতিতে কোমর ব্যথার জন্য বিভিন্ন ধরণের ম্যানুয়াল চিকিৎসা পদ্ধতি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ, ইলেকট্রোথেরাপিউটিক মডালেটিস ব্যবহার এর মাধ্যমে কোমর ব্যথাকে সম্পূর্ণ নিরাময় করা হয়। তবে এজন্য আপনাকে খু্বই সচেতন থাকেতে হবে এবং গ্রাজুয়েট ডিগ্রিধারী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের কাছ থেকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে।

কোমর ব্যথায় সার্জারি:

সাধারণত ফিজিওথেরাপি ও ঔষধে কোমর ব্যথা ভালো হয়ে যায়। তবে কিছু কিছু  ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন পরে । আর সেই কারণগুলো হলো:

  • যদি ঔষধ ও ফিজিওথেরাপি দেওয়ার পর অবস্থা আরো খারাপ হয় তখন সেই কোমর ব্যথার কারণে অপারেশন করা যেতে পারে।
  • কেউ ‍যদি কোমর ব্যথার কারণে প্রসাব-পায়খানা ধরে রাখতে না পারে তার জন্য সার্জারি করা যেতে পারে।
  • আর কোমর ব্যথার কারণ ‍যদি প্যাথোলজিক্যাল হয়। সেইক্ষেত্রে জীবন সংকটাপূর্ণ হয়, তখন সার্জারি করা যেতে পারে।

কোমর ব্যথার প্রি-অপারেটিভ ও পোস্ট অপারেটিভ চিকিৎসা:

  • কোমর ব্যথার কারণে ‍যদি অপারেশন প্রয়োজন পড়ে সেই ক্ষেত্রে অপারেশন পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে।
  • কোমর ব্যথার কারণে অপারেশন পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা কোমর ব্যথাকে সারিয়ে তুলতে সহায়তা করে।

কোমর ব্যথায় আকুপাংচার:

  • কোমর ব্যথার কারণে বর্তমানে আকুপাংচার একটি জনপ্রিয় চিকিৎসা। তবে আকুপাংচার চিকিৎসা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা একটু ‍দ্বিধায় আছেন।
  • কোমর ব্যথার কারণে আকুপাংচার চিকিৎসায় পাঁচটি গুরত্বপূর্ণ  আকুপাংচার পয়েন্ট  রয়েছে। যা যথাক্রমে পেট, হিপ বোন, হাটুর পেছনের অংশ, হাত, অবস্থিত ।

কোমর ব্যথায় খাবারের তালিকা:

  • কোমর ব্যথার কারণে আদা খাওয়া যেতে পারে। কারণ আদাতে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে। তাই কোমর ব্যথা কমাতে আদা গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • কোমর ব্যথা কমাতে লেভুর শরবত খাওয়া যেতে পারে। কারণ লেভুতে ভিটামিন সি থাকে। যা ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।
  • কোমর ব্যথার জন্য ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ, ঘি, চিজ, ফল শাক সবজি, বাদাম প্রভৃতি খাবেন।

কোমর ব্যথার চিকিৎসায় সতর্কতা:

কোমর ব্যথার কারণে মানুষ চিকিৎসা নিতে গিয়ে অনেক সময় অপচিকিৎসার স্বীকার হয়। তাই আপনাকে প্রথমে জানতে হবে আপনার কোমর ব্যথা কি মেকানিক্যাল না প্যাথোলজিক্যাল?

  • যদি আপনার মেকানিক্যাল অর্থাৎ স্বাভাবিক চলাফেরায় অসুবিধা হয় তাহলে আপনি একজন গ্রাজুয়েট ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • আর আপনার কোমর ব্যথার কারণ অন্য কিছু হয় সেইক্ষেত্রে আপনি একজন ফিজিশিয়ান এর পরামর্শ নিতে পারেন।
  • তবে অধিকাংশ কোমর ব্যথার কারণ মেকানিক্যাল। তাই আপনি কোমর ব্যথার কারণে গ্রাজুয়েট ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

 

ধন্যবাদ
ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি – সিআরপি )  , এমপিটি ( অর্থোপেডিকস )
পিজিসি  ইন আকুপাংচার ( ইন্ডিয়া ) ,
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি , ইউ এস এ এবং ইন্ডিয়া ।

ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট  ,  ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার

উত্তরা শাখা – ০১৯৩২-৭৯৭২২৯  ( এপয়েন্টম্যান্টের জন্য )

বনানী শাখা – ০১৭১০-৮৫০৫৬৩ ( এপয়েন্টম্যান্টের জন্য )


ফেইসবুক প্রোফাইল দেখুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top