হাটু ব্যথা খুবই কমন একটা সমস্যা । বয়স্কদের হাটু ব্যথার অন্যতম কারণ হল অস্টিও আর্থ্রাইটিস , আমাদের কম বয়সীদের হাটু ব্যথার প্রধান কারণ হল হাঁটুতে ইনজুরি । হাঁটু ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ গুলো এবং এর প্রতিকার নিয়ে এখানে সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করেছি ।
হাঁটু ব্যথার কারণ /হাঁটু ব্যথা কেন হয় ?
হাঁটু ব্যথার কারণ ও প্রতিকার বুঝতে হলে প্রথমে আমাদের প্রথমেই জানতে হবে হাঁটু ব্যথা কেন হয়/ হাঁটু ব্যথার কারণ। চলুন জেনে নেই হাঁটু ব্যথা কেন হয়?
- হাঁটু ব্যথার অন্যতম কারণ হল বয়স। অর্থাৎ আপনার বয়স যত বাড়বে হাঁটু ব্যথা তত বেড়ে যাবে।
- আঘাতজনিত কারণে আপনার হাঁটু ব্যথা হতে পারে।
- হাঁটুর মাংসপেশির শেষে শক্ত রশির মত টেনডন থাকে। কোন কারণে এই টেনডনে প্রদাহ হলে হাঁটু ব্যথা হতে পারে।
- হাঁটুর সামনে প্যাটেলা নামে ছোট একটি অস্থি থাকে। আর এ অস্থিটি তার জায়গা থেকে সরে গেলে হাঁটু ব্যথা হতে পারে।
- হাঁটু ব্যথার অন্যতম কারণ হল ব্রার্সাইটিস । এটা সাধারণত হাঁটুর উপরে বেশি চাপ পড়ার কারণে হয়ে থাকে। বিশেষ করে ইনজুরি, দীর্ঘ সময় হাঁটুর উপর করে বসা, অতিরিক্ত হাঁটু ব্যবহার এর কারণে হয়ে থাকে।
- মাংসপেশি ও লিগামেন্ট ইনজুরির কারণে হাঁটু ব্যথা হয়ে থাকে।
- হাঁটুর হাড় বা প্যাটেলা ভেঙ্গে গেলে হাঁটু ব্যথা হতে পারে।
- আর্থাইটিস অর্থাৎ জয়েন্টে প্রদাহ হলে হাঁটু ব্যথা হতে পারে।
- অনেক সময় ক্যান্সার এর প্রভাব হাঁটু জয়েন্টে ছড়িয়ে যেতে পারে। যার কারণে হাঁটু ব্যথা হতে পারে।
- অস্টিওপোরেসিস বা হাড়ক্ষয়ের কারনে হাঁটু ব্যথা হয়ে থাকে।
- জয়েন্টে ইনফেকশনের কারণে হাটু ব্যথা হতে পারে।
হাঁটু ব্যথা কাদের বেশি হয় ?
হাঁটু ব্যথা পুরুষে বেশি হয় না নারীদের বেশি হয়, এনিয়ে অনেক গবেষণা রয়েছে। তবে হরমোজনিত কারণে নারীদের হাঁটু ব্যথা বেশি হয়ে থাকে। গবেষণা আরো বলছে বিশেষ করে ৪০ বছর বা তার থেকে বেশি বয়সী নারী বা পুরুষের হাঁটু ব্যথা হয়ে থাকে।
হাঁটু ব্যথার লক্ষণ:
হাঁটু ব্যথার লক্ষণ জানার মাধ্যমে আমরা হাটু ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পাবো। চলুন জেনে নেই হাঁটু ব্যথার লক্ষণগুলো
- হাঁটু ফুলে যাবে যা হাঁটু ব্যথার লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি লক্ষণ।
- হাঁটুর জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাবে।
- হাঁটুর জয়েন্ট লাল ও গরম হয়ে যাবে।
- হাঁটুর অস্থিসন্ধি নাড়াতে অসুবিধা হবে।
- সোজা হয়ে দাঁড়াতে অসুবিধা হবে।
- হাঁটু ভাজ করতে অসুবিধা হবে।
- হাঁটুর ভারসাম্য রাখতে পারবে না।
- সিড়ি দিয়ে উঠানামা করলে ব্যথা অনুভূত হবে।
- হাঁটু ব্যথার লক্ষণগুলোর মধ্যে বিশেষ একটি লক্ষণ হলো হাঁটুর অস্থিসন্ধিতে বিভিন্ন শব্দ শোনা যাওয়া।
হাঁটুর ব্যথা সরানোর উপায়/হাঁটু ব্যথার কারণ ও প্রতিকার:
হাঁটু ব্যথার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা জানব হাঁটু ব্যথার চিকিৎসা/হাঁটু ব্যথা সরানোর বিশেষ বিশেষ উপায় সম্পর্কে।হাঁটু ব্যথার সাধারণ কারণগুলো প্রকাশিত হলে আপনি বাসায় কিছু নিয়মকানুন মেনে চললেই ব্যথা কমে যাবে। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে আপনার হাঁটু ব্যথা যদি ইনজুরি অথবা দূর্ঘটনা থেকে হয়ে থাকে তাহলে দ্রুত আপনার নিকটস্থ হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাবেন।
হাঁটুর ব্যথা সারানোর ঘরোয়া উপায়:
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং হাঁটুতে ওজন বহন করা থেকে বিরত থাকুন।
- হাঁটু ব্যথার প্রথম দিনে প্রতি ঘন্টায় ১৫মিনিট পর পর বরফ ব্যবহার করবেন। তার পরবর্তী দিন থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে চার বার বরফ ব্যবহার করবেন। তবে বরফ করার সময় তোয়ালে ব্যবহার করবেন। তবে বরফ ব্যবহার করার সময় ঘুমিয়ে পড়বেন না, এবিষয়ে খেয়াল রাখবেন।
- হাঁটুকে যতসম্ভব উচু করে রাখবেন। কারণ হাঁটুকে উচু করে রাখলে আপনার হাঁটু ফোলা কমে যাবে।
- ইলাস্ট্রোকেব ব্যান্ডেজ ব্যবহার করবেন। যা হাঁটু ফোলা কমাবে এবং হাঁটুকে সাপোর্ট করবে।
- হাঁটুর ব্যথা সারানোর ঘরোয়া উপায় এর মধ্যে অন্যতম উপায় হলো ঘুমানোর সময় দুই হাঁটুর মাঝে বালিশ ব্যবহার করবেন।
- হাঁটু ব্যথা হলে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করুন । যা শরীরকে ঝরঝরে ও হাঁটু ব্যথা কমাতে সাহায্য করে থাকে।
- হাঁটুর ফোলা কমাতে গরম সেক দেওয়া যেতে পারে। যা তাপমাত্রা ও ফোলা কমাতে সাহায্য করবে।
- হাঁটু ব্যথার কারণ ও প্রতিকার এর মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় উপায় হল দেহের অতিরিক্ত ওজন থাকলে তা অবশ্যই কমাতে হবে।
- টয়লেটে উচু কমোড ব্যবহার করবেন।
- হাঁটুতে বসা যাবে না।
হাঁটু ব্যথার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা:
হাঁটু ব্যথার কারণ ও প্রতিকার এর আলোচনায় হাঁটু ব্যথার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সম্পর্কে জানব। হাঁটু ব্যথায় ফিজিওথেরাপি খুবই কার্যকর চিকিৎসা। মাংসপেশির শক্তি বাড়াতে এ্বং হাঁটু ব্যথা কমাতে ফিজিওথেরাপি গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফিজিওথেরাপি চলনশক্তি, সহজেই শুয়া থেকে বসতে ও বসা থেকে দাঁড়াতে সহায়তা করে।
প্রাথমিক পর্যায়ে ফিজিওথেরাপি চিকিতসক অ্যাসেসমেন্ট এবং ট্রিটমেন্ট প্লান করবেন। তারপর প্রয়োজন অনুযায়ী বিশেষ করে হাঁটুর সামনের মাংসপেশি কোয়াড্রিসেপস, পেছনের মাংসপেশি হ্যামস্ট্রিং, গ্যাস্ট্রোকনেমিয়াস, সোলিয়াস, টেন্ডো- অ্যাকিলিস মাংসপেশির স্ট্রেচিং করানো যেতে পারে।
এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের এক্সারসাইজ ও ইলেকট্রোথেরাপি ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে আল্ট্রাসাউন্ড হাঁটু ব্যথায় গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার জন্য অবশ্যই একজন গ্রাজুয়েট ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ধন্যবাদ
বিপিটি ( ঢাবি ) ,
এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস , ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার , ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি , ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম , ইন্ডিয়া ।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট , ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার ।
পরামর্শ পেতে – ০১৭১০-৮৫০৫৬৩ , ০১৯৩২৭৯৭২২৯