ঘাড় ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় জানতে হলে আমাদের প্রথমে ঘাড় ব্যথা কেন হয়, হঠাৎ ঘাড় ব্যথার কারণ, ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ এবং ঘাড় ব্যথার প্রতিকার সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে।
ঘাড় ব্যথা কেন হয় / ঘাড় ব্যথার কারণ ?
ঘাড় ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় জানার আগেই চলুন জেনে নেই ঘাড় ব্যথা কেন হয় ?
- ঘাড় ব্যথা কেন হয় তার কারণ খুজতে গিয়ে বর্তমানে যে উত্তরটি সবার আগে আসে তা হলো আমরা দীর্ঘ সময় কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, ট্যাব এর সামনে বসে কাজ করি। একাজ করার সময় আমাদের দেহের যে ভঙ্গিমা থাকা দরকার সেইটা আমরা পালন করি না।
- আমাদের ঘাড়ের মধ্যে ৭টা মেরুদন্ডের হাড় রয়েছে। আর হাড়গুলোর মাঝে জেলির মত কিছু পানীয় থাকে, যাকে ডিস্ক বলে। কোন কারণে এই ডিস্ক বের হয়ে আসলে ঘাড়ের মধ্যে যে স্নায়ু রয়েছে সেখানে চাপ পড়ে। যার কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
- বিভিন্ন সময় আমাদের ঘাড়ের মাংসপেশিগুলো অতিরিক্ত ব্যবহার কারণ ইনজুরি হতে পারে। যার কারণে ঘাড় ব্যথা হতে পারে।
- রিউমাটয়েড আর্থাইটিস, মেনিনজাইটিস এবং ক্যান্সার এর কারণে ঘাড় ব্যথা হতে পারে।
- বয়স হওয়ার সাথে সাথে ঘাড়ের পেশিগুলো দূর্বল হয়ে পড়ে যার কারণে ঘাড় ব্যথা হতে পাড়ে।
- আমাদের ঘাড়ের হাড়ের মধ্যে যে জয়েন্ট রয়েছে তা দেহের অন্যান্য জয়েন্টের তুলনায় দূর্বল। যা আমাদের বয়সের সাথে সাথে আরো দূর্বল হয়ে পড়ে। যার ফলে ঘাড় ব্যথা হতে পারে।
- হতাশা, দুশ্চিন্তা মানসিক সমস্যা থেকে ঘাড় ব্যথা হতে পারে।
উপরুক্ত কারনগুলো থেকে ঘাড় ব্যথা কেনো হয় আশা করি বুঝতে পেরেছেন। এখন চলুন ঘাড় ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় এর পরবর্তী বিষয়গুলো জেনে নেই।
ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ ?
ঘাড় ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় বুঝতে হলে আমাদের প্রথমেই যেই বিষয়টা জানা উচিত তা হলো ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ ?
- রিউমাটয়েড আর্থাইটিস বা বাত ব্যথার কারণে ঘাড় ব্যথা হয়ে থাকে।
- মেনিনজাইটিস অর্থাৎ কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র (মস্তিষ্ক, সুষুম্না স্নায়ু ) এর স্নায়ুর বাইরের প্রদাহ।
- ক্যানসার।
- মাংসপেশির আঘাত, প্রদাহ প্রভৃতি সমস্যা থাকলেই সাধারণত ঘাড় ব্যথা হয়ে থাকে।
ঘাড় ব্যথার লক্ষণ :
ঘাড় ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় জানতে হলে ঘাড় ব্যথার লক্ষণগুলো অবশ্যই জানতে হবে।
- দীর্ঘক্ষন মাথা একদিকে ধরে রা্খতে পারবে না। বিশেষ করে গাড়ির ড্রাইভিং, কম্পিউটারে কাজ করতে প্রচন্ড ব্যথা হবে।
- মাংশপেশি শক্ত হয়ে যাবে।
- মাথাকে কোনদিকে নাড়াতে পারবে না।
- মাথা ব্যথা করবে
- হাত ও বাহু ঝিনঝিন এবং অবশ লাগবে প্রভৃতি ঘাড় ব্যথার লক্ষণ।
ঘাড় ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় :
জীবন মান পরিবর্তন:
জীবন মান পরিবর্তনই ঘাড় ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় এর অন্যতম পদ্ধতি। চলুন জেনে নেই ঘাড় ব্যথার জন্য আমরা কি করব আর কি করব না?
- একধারে দীর্ঘসময় মোবাইল, ল্যাপটপের সামনে বসে কাজ করবেন না। কিছু সময় কাজ করার পর একটু সময় বিশ্রাম নিন। তারপর পুনরায় কাজ করুন। সেইক্ষেত্রে একঘন্টা কাজ করার পর ১০মিনিট বিশ্রাম নিন।
- আপনার বসার ভঙ্গিমা ঠিক করতে হবে। যখন আপনি বসবেন মেরুদন্ড যেনো একটা সরলরেখায় থাকে এ বিষয়ে খেয়াল রাখবেন।
- সিগারেট, বিড়ি, গোল, জর্দা প্রভৃতি ধুমপান ঘাড় ব্যথার ঝুকি বাড়িয়ে থাকে। তাই এগুলো অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
- অনেক শিক্ষার্থী যারা ঘাড়ে ভারী ব্যাগ বহন করে থাকে। মনে রাখবেন ঘাড়ে অতিরিক্ত ওজন বহন ঘাড় ব্যথা হয়ে থাকে।ৎ
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালতে সাইন্টেফিক ব্যাঞ্চ এবং চেয়ার ব্যবহার করুন। বর্তমান সময়ে ঘাড় ব্যথা হওয়ার পেছনে অন্যতম ভূমিকা পালন করে থাকে অস্বাভাবিক ভঙ্গিমা। আর এ ভঙ্গিমার জন্য দায়ী বিজ্ঞানভিত্তিক আসবাব পত্র ব্যবহার না করা।
- আপনি যে বিছানা ব্যবহার করবেন তা যেনো খুব নরম না হয়। তারপর আপনি যে বালিশ ব্যবহার করবেন তা যেনো খুব উচু হওয়া যাবে না।
- আপনি যে কোন কাজই করবেন তা অতিরিক্ত করবেন না। যেমন অতিরিক্ত সাইক্লিং , অতিরিক্ত দৌড়াদৌড়ি যার জন্য ঘাড় ব্যথা হয়ে থাকে। ঘাড় ব্যথা থেকে মুক্তির উপায়গুলোর মধ্যে জীবন মান এর পরিবর্তন খুবই গুরত্বপূর্ণ বিষয়।
ঘাড় ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় এর মেডিক্যাল চিকিৎসা:
ঘাড় ব্যথার রোগ নির্ণয়:
ঘাড় ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় জানতে হলে প্রথমে রোগ নির্ণয় করতে হবে। আর রোগ নির্ণয় এর জন্য নিম্নোক্ত পরীক্ষাগুলো করা হয়।
- এক্সরে
- এমআরআই
- সিটিস্ক্যান
- রক্ত পরীক্ষা প্রভৃতি পরীক্ষাগুলো করা হয়।
ঘাড় ব্যথার চিকিৎসা:
ঘাড় ব্যথার ঔষধ:
ঘাড় ব্যথার জন্য ঔষধ খুব একটা উপকার করে না। হয়ত সাময়িক সময়ের জন্য আপনার ব্যথা কমিয়ে থাকে কিন্তু আপনার দীর্ঘমেয়াদি কিডনি, ফুসফুস এর ক্ষতি করে থাকে। তাই যতসম্ভব ব্যথার ঔষধ পরিহার করা উচিত। ট্রাইগ্লিসারিক অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট যা ঘাড় ব্যথা কমিয়ে থাকে।
ঘাড় ব্যথায় ইনজেকশন:
ঘাড় ব্যথায় স্টেরয়েড জাতীয় ইনজেকশন অনেক সময় ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
ঘাড় ব্যথায় ফিজিওথেরাপি:
ঘাড় ব্যথায় অত্যন্ত কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি হলো ফিজিওথেরাপি। কারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন চিকিৎসা পদ্ধতি হলো ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতি। তবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অবশ্যই একজন গ্রাজুয়েট ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের কাছ থেকে নিতে হবে।
ঘাড় ব্যথায় থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ:
ঘাড় ব্যথা কমাতে ব্যয়াম গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে এই শারিরীক ব্যয়াম অবশ্যই একজন গ্রাজুয়েট ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে।
ঘাড় ব্যথায় ট্রাকশন:
ঘাড় ব্যথায় ট্র্যাকশন অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে এই ট্রাকশন নেওয়ার জন্য অবশ্যই একজন গ্রাজুয়েট ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ঘাড় ব্যথায় অস্ত্রপাচার:
যদি কোন চিকিৎসায় ঘাড় ব্যথা না ভালো হয় , সেইক্ষেত্রে সর্বশেষ অস্ত্রপাচার করা যেতে পারে।
উপরুক্ত আলোচনার মাধ্যমে ঘাড় ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে আমাদের ধারণা হয়েছে যে আমাদের জীবনমান পরিবর্তনই ঘাড় ব্যথা কমাতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ধন্যবাদ
বিপিটি ( ঢাবি ) ,
এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস , ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার , ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি , ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম , ইন্ডিয়া ।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট , ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার ।
পরামর্শ পেতে – ০১৭১০-৮৫০৫৬৩ , ০১৯৩২৭৯৭২২৯