আজ আমরা আপনাদের সাথে কোমরের ব্যথা কেন হয় , মাজা ব্যাথার ঘরোয়া চিকিৎসা, কোমরের ব্যথা কমানোর উপায় ব্যায়াম , মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ ও প্রতিকার, কোমরের ব্যথা কমানোর ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট ইত্যাদি এসকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি এ থেকে বিশেষভাবে ঘরোয়া চিকিৎসা নিতে পারবেন এবং প্রয়োজনে আমাদের সাথে আলোচনা করতে পারবেন।
কোমরের ব্যথা কেন হয় ?
কোমর ব্যথার অনেকগুলি কারণ রয়েছে। কিছু সাধারণ কারণ হল:
- পেশী বা টেন্ডনের আঘাত থেকে: কোমরের ব্যথার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল পেশী বা টেন্ডনের আঘাত ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, যেমনঃ খেলাধুলা বা ভারী জিনিস তোলা ইত্যাদি।
- মেরুদণ্ডের সমস্যা থেকে: মেরুদণ্ডের সমস্যা থেকেও কোমর ব্যথার উৎপত্তি হয়। যেমনঃ স্পন্ডাইলোসিস বা স্পন্ডাইলোলাইসিস, কোমরের ব্যথার আরেকটি অন্যতম কারণ।
- অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার কারণে: শরীরের অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা কোমর ব্যথার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- বসা বা দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে ভুল ভঙ্গি্র থেকে: ভুল ভঙ্গি, যেমনঃ দীর্ঘক্ষণ একই ভঙ্গিতে বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে থাকার ফলে কোমর ব্যথা হতে পারে।
- অবসাদ বা ইনফেকশন থেকে: কখনও কখনও, অবসাদ বা ইনফেকশন থেকে কোমরের ব্যথা হতে পারে।
মাজা ব্যাথার ঘরোয়া চিকিৎসা কি?
আপনার মাজা বা কোমরে ব্যথা হলে তা দূর করতে কিছু ঘরোয়াভাবে চিকিৎসা নিতে পারেন নিজে নিজেই। কিছু উপায়সমূহ হলোঃ
১. বিশ্রাম: আপনার মাজা ব্যথা বেশি হলে কিছুদিন বিশ্রাম নিন। এতে মাংসপেশির টান কমবে এবং মাজা ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে। ব্যথার সময় বিশ্রাম নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি সম্ভব হয়, একটি সোজা বিছানায় শুয়ে থাকুন এবং আপনার কোমরের নিচে একটি বালিশ রাখুন।
২. সেঁক: ব্যথার জায়গায় গরম সেঁক দিলে ব্যথা কমতে পারে। গরম সেঁক প্রয়োগ ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে। সেঁক প্রয়োগের জন্য, একটি গরম তোয়ালে বা গরম জলের বোতল বা হট ব্যাগ আপনার ব্যথার জায়গায় ১৫-২০ মিনিটের জন্য রাখুন।
৩. আইস প্যাক: শরীরের ব্যথার জায়গায় ঠান্ডা আইস প্যাক দিলেও ব্যথা কমতে পারে। তাই মাজা ব্যথা কমাতে আইস প্যাক দিন । ঠান্ডা প্যাক প্রয়োগ করলে ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে। এজন্য একটি আইস প্যাক বা বরফের টুকরো একটি তোয়ালে তে মুড়ে নিন এবং আপনার ব্যথার জায়গায় ১৫-২০ মিনিটের জন্য রাখুন। বেশিক্ষণ রাখবেন না।
৪. মাসাজ থেরাপি: একজন দক্ষ থেরাপিস্টের মাধ্যমে ম্যাসাজ করালে আপনার মাজা ব্যাথা কমতে পারে।
৬. ব্যায়াম: কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়াম মাজা ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, ব্যায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই একজন ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নিন।
মাজা ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসার পাশাপাশি কিছু নিয়ম মেনে চললে ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। যেমন:
- সঠিক ভঙ্গিতে বসুন, দাঁড়ান এবং হাঁটুন। আপনার কোমর সোজা রাখুন এবং আপনার পিঠের পেশীগুলিকে সংকুচিত করুন।
- ভারী জিনিস উঠানামা করাতে সতর্ক থাকুন অথবা সাহায্য নিন। কোমরকে অতিরিক্ত চাপ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন। যা আপনাকে সুস্থ রাখবে। নিয়মিত ব্যায়াম কোমর পেশীগুলিকে শক্তিশালী করতে এবং মেরুদণ্ডের স্থিতিশীলতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
মাজা ব্যথা যদি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভালো না হয় বা ব্যথার সাথে অন্যান্য উপসর্গ, যেমন জ্বর, শরীর ব্যথা, বা পায়ে অবশতা দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আরও জানুনঃ ঘন ঘন প্রসাব কি কারনে হয়
মাজা বা কোমরের ব্যথা কমানোর জন্য সময় সতর্কতা
কোমর ব্যথা আপনার ব্যায়াম শুরু করার পরেও হতে পারে বা থেকে যেতে পারে। তাই মাজা ব্যাথা এর ঘরোয়া চিকিৎসা শুরু করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় অবশ্যই মনে রাখবেন:
- আপনার ব্যথার তীব্রতার উপর নির্ভর করে ব্যায়ামের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকুন।
- যদি আপনার মাজা ব্যথা বাড়ে, তবে ব্যায়াম বন্ধ করুন।
- প্রয়োজনে ডাক্তার বা ফিজিওথেরাপিস্টের সাথে কথা বলুন।
মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ ও প্রতিকার
মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণগুলি পুরুষদের কোমর ব্যথার কারণগুলির অনুরূপ। তবে, কিছু কিছু কারণ রয়েছে যা মহিলাদের কোমর ব্যথার ঝুঁকি বাড়ায়। এর মধ্যে মূল কারনগুলো হলো-
- মাসিক চক্র: মাসিক চক্রের কারণে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা হতে পারে, যা মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে।
- গর্ভধারণ: গর্ভধারণ কোমরের পেশীগুলিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে।
- মেনোপজ: মেনোপজের সময় হরমোনের ভারসাম্যহীনতা হতে পারে, যা মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে।
- ওজন বৃদ্ধি: ওজন বৃদ্ধি কোমরের উপর চাপ বাড়াতে পারে, যা মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে।
মহিলাদের কোমর ব্যথার কিছু সাধারণ কারণ
- পেশীতে টান : পেশীতে টান লাগলে সেটি মাজা ব্যাথা তীব্র হতে পারে। ভারী বস্তু তোলা, দীর্ঘ সময় ধরে একই ভঙ্গিতে বসা বা দাঁড়ানো, বা তীব্র আঘাতের কারণেও হতে পারে।
- ডিস্ক প্রলাপস (Disk Prolapse): এই অবস্থায় মেরুদণ্ডের ডিস্ক তার স্থান থেকে সরে যায়। এর ফলে মাজা ব্যাথা, ঝিনঝিন বা অবশতা এবং পায়ে ব্যথা হতে পারে।
- অস্টিওআর্থারাইটিস (Osteoarthritis): অস্টিওআর্থারাইটিস হল এমন একটি অবস্থা যেখানে মেরুদণ্ডের হাড়ের ক্ষয় হয়। এটি কোমরে ধীরে ধীরে তীব্র ব্যথার সৃষ্টি করে ।
- জয়েন্টের ব্যথা: জয়েন্টে প্রদাহের ফলে কোমরে ব্যথা, জ্বর হতে পারে। এটি আর্থ্রাইটিস, লুপাস বা অন্যান্য রোগের কারণে হতে পারে।
কোমরের ব্যথা কমানোর ট্যাবলেট
মাজা ব্যাথা কমানোর জন্য ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এটি সবসময় কার্যকরী নয়। কোমরের ব্যথার অনেকগুলি কারণ রয়েছে, যার মধ্যে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট শুধুমাত্র কিছু ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে।
অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে যে, ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট মাজা ব্যাথা কমাতে কার্যকর নয়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্পন্ডাইলোসিসযুক্ত লোকদের মধ্যে, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সম্পূরক কোমরের ব্যথার তীব্রতা বা ফ্রিকোয়েন্সি কমাতে সাহায্য করেনি।
সাধারণ জিজ্ঞাসাঃ
মাজা ব্যথার বেল্ট এর কার্যকারিতা কি ?
মাজা ব্যথার বেল্ট একটি মেডিকেল ডিভাইস যা মাজা ব্যথা কমাতে সাহায্য করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।মাজা ব্যথার বেল্টগুলি সাধারণত হালকা থেকে মাঝারি মানের মাজা ব্যথার জন্য খুবই কার্যকারি হয়।
অল্প বয়সে কোমর ব্যাথার কারন কি ?
অতিরিক্ত ওজন , দীর্ঘ সময় ধরে একই ভঙ্গিতে বসে থাকা বা দাঁড়ানো , নিয়মিত ব্যায়াম না করা ইত্যাদি কারণে অল্প বয়সে কোমর ব্যাথা হয় ।
Consultant Physiotherapist
BPT (DU), MPT (Ortho)
PGC in Acupuncture (India)
Specially Trained in Ozone Therapy
পোষ্ট টি আমার খুব উপকারে আসলো। ধন্যবাদ।
চমৎকার লিখেছেন, ধন্যবাদ ।