জেনে নিন স্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে

স্ট্রোকের লক্ষণ

স্ট্রোক বর্তমান  পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি রোগ । কিন্তু মজার বিষয় হলো অনেকে না জানার কারণে স্ট্রোককে হার্টের রোগ মনে করে। সত্যিকার্থে স্ট্রোক হলো মস্তিষ্কের রক্তনালীর একটি সমস্যা । যেখানে মস্তিষ্কের রক্তনালী ব্লক হয়ে যাবে অথবা রক্তনালী ছিড়ে যাবে।

স্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে না জানার কারণে শতকরা ২০ ভাগ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার এক মাসের মধ্যেই মারা যায়। আর যারা বেচে থাকে তাদের মধ্যে ৫০ ভাগ মানুষ শারিরীক অক্ষমতায় ভুগে থাকে।

 

স্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয়
স্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয়

 

স্ট্রোকের লক্ষণ:

স্ট্রোক হওয়ার সাথে সাথে কিছু মারাত্মক উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যার কারণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। স্ট্রোকের কারণে হাত, পা, মুখের প্যারালাইসিস হতে পারে।

  • দেহের একপাশের দূর্বলতা স্ট্রোকের বিশেষ একটি লক্ষণ।
  • কথা বলতে বা পুরো বাক্য একবারে বলতে অসুবিধা হবে।
  • চোখে দেখতে অসুবিধা হবে।
  • চোখে অনেক সময় একই জিনিস দুইবার দেখবে।
  • দেহের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারবে না।
  • প্রচন্ড মাথা ব্যথা থাকবে।
  • ঠিকভাবে হাটতে পারবে না।
  •  রোগী অনেক সময় অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

জেনে মিনি স্ট্রোকের লক্ষণ:

মিনি স্ট্রোক হল স্ট্রোক হওয়ার  পূর্ববর্তী একটি অবস্থা। মিনি স্ট্রোকে খুবই সামান্য সময়ের জন্য মস্তিষ্কে রক্তনালীর সমস্যা হয়। যার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশিত হয়। আবার কিছু সময় পর সেগুলো স্বাবাভিক হয়ে যায়।আর এই স্ট্রোককে ট্রানজিয়েট ইশকেমিক স্ট্রোকও বলা হয়।

অনেক সময় মিনি স্ট্রোক চিহ্নিত  করা কঠিন । তবে  কিছু বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে আমরা মিনি স্ট্রোককে চিনে থাকি। তা হলো:

  • মাথা ঘোরা।
  • শরীর অবশ হয়ে যাওয়া।
  • চোখে ঝাপসা দেখা।
  • বেশির ভাগ সময় ১ ঘন্টার মধ্যে প্রকাশিত লক্ষণগুলো বিলীন হয়ে যায়।
  • মিনি স্ট্রোকের লক্ষণগুলো সর্বচ্চো ২৪ ঘন্টা থাকতে পারে।

স্ট্রোক নির্ণয় করার বিশেষ উপায়:

স্ট্রোক নির্ণয় করার একটি বিশেষ টেকনিক হল  ফাস্ট পদ্ধতি ।

ফ-ফেইস বা চেহারা অর্থাৎ হাসি দিলে চেহারা একদিকে ঝুকে পরে কি না?

আ- আর্ম বা বাহু অর্থাৎ রোগীকে দুটি হাত উচু করতে বললে কোন হাত নিচের দিকে ঝুকে পড়ে কিনা?

স-স্পীচ অর্থাৎ কোন রোগীর কথা বলতে অসুবিধা হয় কিনা?

ট-টাইম বা সময়। এসব লক্ষণ দেখামাত্র রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা।

ফাস্ট পদ্ধতি ব্যবহার করে আমরা খুব সহজে স্ট্রোকের লক্ষণগুলো বুঝতে পারি।

স্ট্রোক কেন হয়?

মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ আমাদের দেহের বিভিন্ন অংশকে নিয়ন্ত্রন করে। কোন কারণে মস্তিষ্কের কোন অংশে রক্ত সরবরাহ না হলে অথবা সরাসরি সেই অংশ আঘাত প্রাপ্ত হলে ঐ অংশ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বন্ধ হতে পারে। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস, মদ্যপান, ধুমপান, পলিসাইথেমিয়া, হার্টের বিভিন্ন রোগ যেমন মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন, হার্টের সংক্রমন, জন্মনিয়ন্ত্রক বিভিন্ন বড়ি, হরমন থেরাপি প্রভৃতি কারণে স্ট্রোক হতে পারে।

স্ট্রোকের প্রকারভেদ:

সিডিসি এর মত অনুযায়ী স্ট্রোক তিন প্রকার ধরনের-

১। ইশকেমিক স্ট্রোক  : মস্তিষ্কের রক্তনালীর ভিতরে রক্ত জমাট বেঁধে (blood Clot) রক্ত পরিবহনে বিঘ্ন ঘটলে মস্তিষ্কের কোষ,টিস্যু মারা যায়, আর একেই ইশকেমিক স্ট্রোক বলে। প্রায় ৮৫ ভাগ স্ট্রোকই হলো ইশকেমিক স্ট্রোক ।

২। হেমোরেজিক স্ট্রোক : ব্রেইনের  ভিতরে কোন রক্তনালী ছিঁড়ে গেলে হেমোরেজিক স্ট্রোক হয় । প্রায় ১৫ ভাগ স্ট্রোকই হলো হেমোরেজিক স্ট্রোক।

৩। মিনি স্ট্রোক ঃ মস্তিষ্কের রক্তনালীতে অল্প কিছু সময়ের জন্য রক্ত সরবরাহ বিঘ্ন হলে এই ধরনের স্ট্রোক হয় । তা আপনা আপনি কিছু সময় পর ভালো হয়ে যায়।

 

স্ট্রোকের ম্যানেজমেন্ট:

স্ট্রোকের ডায়াগনোসিস:

স্ট্রোকর লক্ষণ জানার পাশাপাশি  স্ট্রোকের ডায়াগনোসিস সঠিকভাবে করতে হবে। যার জন্য নিম্নোক্ত পরীক্ষাগুলো করা হয়ে থাকে।যথা:

  • মাথার সিটি স্ক্যান
  • কম্লিট ব্লাড কাউন্ট
  • রক্তের সুগার পরীক্ষা
  • সেরাম লিপিড প্রোফাইল
  • সেরাম ইলেকট্রোলাইট পরীক্ষা
  • বুকের এক্সরে
  • ইসিজি

স্ট্রোকের চিকিৎসা:

স্ট্রোক হলো একটি মেডিকেল ইমারজেন্সি অবস্থা। তাই রোগীকে যত দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া যায় ততই ভালো। স্ট্রোকের  চিকিৎসা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। ইসকেমিক স্ট্রোক না হেমোরেজিক স্ট্রোক এটার উপর ভিত্তি করেই স্ট্রোকের চিকিৎসা ভিন্ন হয়ে থাকে।

ইসকেমিক স্ট্রোকের চিকিৎসা:

স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলে প্রথমে চিহ্ণিত করতে হবে এটা যে ইসকেমিক স্ট্রোক। স্ট্রোকের লক্ষণ প্রকাশিত হওয়ার ৩ঘন্টার মধ্যে থ্রম্বোলাইটিক ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্তনালীর ব্লকেজ বন্ধ করা যায়। থ্রম্বোটিক ডিভাইস ব্যবহার করে ৩-৪ ঘন্টার মধ্যে আপনার রক্তনালীর ব্লকেজ সারিয়ে ফেলা যায়।

 হেমোরেজিক স্ট্রোকের চিকিৎসা:

হেমোরেজিক স্ট্রোক হওয়ার সাথে সাথে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। হেমোরেজিক স্ট্রোক হলে সাধারণত যে সকল চিকিৎসা করা হয় তা হল:

  • সার্জারি
  • কিছু ড্রাগস
  • সার্জিকাল ক্লিপিং
  • কয়েলিং
  • স্ট্রেয়োটেকটিক রেডিওসার্জারি

স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়:

  • উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করুণ
  • ডায়েবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
  • জীবনমান উন্নত করতে হবে।
  • ধুমপান পরিহার করতে হবে
  • মদ্যপান ছেড়ে দিতে হবে
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ করা
  • নিয়মিত শরীরচর্চা করা।

আরো এরকম লেখা পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন।

 

ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ) , এমপিটি ( ইন্ডিয়া )
প্রতিষ্ঠাতা, ভিশন পেলভিক কেয়ার
প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান,  ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার
উত্তরা, ঢাকা ।
অ্যাপয়েন্টম্যান্ট ঃ  01932797229
ফেইসবুক প্রোফাইল দেখুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top