বয়সজনিত বাতের ব্যথা দূর করার উপায়

বাতের ব্যথা দূর করার উপায়

অস্টিওআর্থ্রাইটিস –  বয়সজনিত বাতের ব্যথা দূর করার উপায়

বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে । বিশেষ করে ৫০ বছরের পর থেকে হাটু, হাত সহ বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা, ফোলে যাওয়া , শক্ত হয়ে যাওয়া বড় একটা সমস্যা । এই সমস্যা মূলত হয়ে থাকে  অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা বয়সজনিত বাতের কারনে ।

 

অস্টিওআর্থ্রাইটিস কি

জয়েন্ট মানেই দুইটা হাড়ের সংযোগস্থল । হাড়ের মাথায় এক ধরনের রাবারের মত কভার থাকে , যেটাকে আমরা কার্টিলেজ বলি । বয়স বাড়ার সাথে কিংবা অতিরিক্ত ব্যবহার বা অতিরিক্ত ওজনের কারনে এই কার্টিলেজ ক্ষয়ে যায় । ফলে হাড়ের সাথে হাড়ের ঘর্ষন হয় , ব্যথা হয় এবং ফোলে যায় , আস্তে আস্তে জয়েন্ট  স্টিফ হয়ে যায় । এটাকে অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা বয়সজনিত বাতের ব্যথা বলে ।

অস্টিওআর্থ্রাইটিস একটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা । আস্তে আস্তে এই সমস্যা বাড়তে থাকে । সঠিক চিকিৎসা না পেলে একটা সময় জয়েন্ট ফিউজড হয়ে যায়, স্বাভাবিক হাটাচলা ব্যাহত হয় । পঙ্গুত্বের অন্যতম বড় কারণ এই অস্টিওআর্থ্রাইটিস ।

বাতের ব্যথা দূর করার উপায়
বাত ব্যথা দূর করার উপায়

 

অস্টিওআর্থ্রাইটিস কেন হয়ে থাকে

অস্টিওআর্থ্রাইটিস মানেই জয়েন্টের কার্টিলেজ ক্ষয় । এই ক্ষয় বয়সের সাথে সাথে হয়ে থাকে । তবে অতিরিক্ত ওজন , অতিরিক্ত ব্যবহার , বংশগত এবং  জয়েন্টে অতীতে কোন আঘাত পেয়ে থাকলে যেমন কার্টিলেজ , লিগামেন্ট বা মিনিসকাস ইনজুরি হয়ে থাকলে পরবর্তিতে অস্টিওআর্থ্রাইটস হয়ে থাকে ।

 

অস্টিও আর্থ্রাইটিস কোন কোন জয়েন্ট হয়ে থাকে

হাত এবং আঙ্গুলের জয়েন্ট , হাটু , হিপ  , মেরুদন্ড এর জয়েন্টে অস্টিও আর্থ্রাইটিস সাধারনত হয়ে থাকে ।

 

অস্টিও আর্থ্রাইটিস কিভাবে বুঝব / অস্টিও আর্থ্রাইটিসের লক্ষণসমূহ

১। ব্যথা

২। জয়েন্ট ফোলে যায়

৩। হাটুতে হলে হাটু ভাঁজ করতে সমস্যা হয়

৪। অনেক সময় জয়েন্টে হালকা চাপ দিলেও ব্যথা হয় ।

আস্তে আস্তে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের তীব্রতা বাড়তে থাকে । অতিরিক্ত ব্যথা , অনেক বেশি ফোলে যাওয়া, জয়েন্ট ফিউজড হয়ে যাওয়া অস্টিওআর্থ্রাইটিসের সিরিয়াস লক্ষণ ।   সঠিক চিকিৎসা না পেলে জয়েন্ট স্টিফ হয়ে যায় , প্রতিবন্ধিতার সম্মুখীন হয় ।

অস্টিও আর্থ্রাইটিস এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মধ্যে পার্থক্য

অনেকে অস্টিওআর্থ্রাইটিস এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসকে এক করে পেলেন । দুইটার লক্ষণ একই হলেও দুইটা সম্পূর্ন আলাদা আর্থ্রাটিস এবং আলাদা চিকিৎসা । অস্টিওআর্থ্রাইটিস বয়স জনিত সমস্যা । রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস যেকোন বয়সে হয়ে থাকে । রিউমাটয়েড একটা অটোইমিউন ডিজঅর্ডার । শরীরের ইমিউন সিস্টেম ভুল করে জয়েন্টকে এটাক করার কারনে এই সমস্যা হয়ে থাকে । সাধারনত উভয় হাতের জয়েন্টে  রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বেশি হয়ে থাকে , পরে আস্তে আস্তে অন্যান্য জয়েন্টেও হয়ে থাকে  । অস্টিওআর্থ্রাইটিস হাটুর জয়েন্টে বেশি হয়ে থাকে ।

 

অস্টিওআর্থ্রাইটিস কিভাবে ডায়াগনোসিস কর

সাধারনত উপসর্গ লক্ষণসমূহ দেখেই অস্টিওআর্থ্রাইটিস ডায়াগনোসিস করা যায় । অস্টিওআর্থ্রাইটিস নির্নয়ের জন্য এক্সরে এমআরআইও অনেক সময় করা হয় । এছাড়া বিভিন্ন ধরনের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষাও প্রয়োজন হতে পারে ,অন্য কোন আর্থ্রাইটিস কিনা  কনফার্ম হওয়ার  জন্য ।

 

অস্টিওআর্থ্রাইটিস চিকিৎসা করার জন্য কার কাছে যাব

বয়সজনিত  এই বাতের ব্যথা দূর করার উপায় কি ? কার কাছে যাব এই বাত ব্যথা হলে – আপনার জয়েন্টে ব্যথা হলে আপনার নিকটবর্তী যেকোন হেলথ কেয়ার প্রফেশনাল বিশেষ করে  ফিজিওথেরাপিস্ট বা ফিজিশিয়ান এর কাছে যেতে পারেন।  তবে অস্টিওআর্থ্রাইটিস কনফার্ম হয়ে গেলে আপনার জন্য সবচেয়ে বেস্ট চিকিৎসা হল ফিজিওথেরাপি । এছাড়া পরবর্তীতে সমস্যা অনেক বেশি হয়ে গেলে, জয়েন্ট স্থায়ীভাবে স্টিফ হয়ে গেলে জয়েন্ট রিপ্লেসম্যান্ট করা লাগতে পারে । সেটা করবেন অর্থোপেডিক সার্জন ।

 

বাতের ব্যথা দূর করার উপায় / অস্টিওআর্থ্রাইটিসে চিকিৎসা

অস্টিওআর্থ্রাইটিসের চিকিৎসা নির্ভর করে আপনার বর্তমানে কি অবস্থা ,  কি কি সমস্যা হচ্ছে । বিশেষ করে ব্যথা থাকলে ব্যথা কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ফিজিওথেরাপি মেথড , লেজার , টেনস এবং শকওয়েভ সহ অনেক মডার্ন ডিভাইস আছে । আপনার ফিজিওথেরাপিস্ট নির্ধারন করবে আপনার কি চিকিৎসা লাগবে। এছাড়া জয়েন্ট ফোলা, স্টিফনেস থাকলেও আলাদা আলাদা চিকিৎসা প্লান ঠিক করতে হবে ।

জয়েন্ট ফোলা থাকলে বাসায় অবশ্যই বরফ দিবেন ।  আপনার ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ মত বাসায় এক্সারসাইজ করবেন ।  বাতের ব্যথা দূর করার ম্যাজিক কোন উপায় নেই , নিয়মিত সঠিক স্ট্রেন্দিং এক্সারসাইজ , বাতের বাতের ব্যথা দূর করার  জন্য অন্যতম চিকিৎসা । এছাড়া ড্রাই নিডেল চিকিৎসা হাটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিসের জন্য অনেক কার্যকরী ।

 

নিম্নোক্ত উপায়ে  আপনি নিজে চেষ্টা করেই আর্থ্রাইটিসকে প্রতিরোধ পারেন অনেকটা-

 

১. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবেন। প্রয়োজনে ডায়েটিশিয়ান দেখিয়ে খাবার প্লান  ঠিক করে নিবেন।

 

২. নিয়মিত সঠিকভাবে ব্যায়াম করবেন। প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপিস্ট দেখিয়ে ব্যায়াম ঠিক করে নিবেন।

 

৩. আঘাত এড়িয়ে চলুন। খেলাধুলার সময় প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সাপোর্ট (Knee Brace) ব্যবহার করবেন।

 

৪. জয়েন্টকে নিরাপদ রাখুন, সঠিকভাবে বসুন, সঠিকভাবে হাটাহাটি করুন, সঠিকভাবে কাজ করুন।

 

৫. মেয়েদের ক্ষেত্রে হাই হিল কম ব্যবহার করুন।

 

৬. ভিটামিন-ডি ও ক্যালসিয়ামের অভাব থাকলে পূরণ করুন।

 

৭. কোন সমস্যা হলে ফিজিওথেরাপিস্ট বা ফিজিশিয়ানের শরণাপন্ন হবেন।

 

ধন্যবাদ।

ডা সাইফুল ইসলাম

কনসালটেন্ট ফিজিওথেরাপিস্ট ( অর্থোপেডিক )

বিপিটি ( ঢাবি ) , এমপিটি ( অর্থোপেডিক )

প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান

ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার, উত্তরা, ঢাকা।

 

 

 

 

Leave a Reply