ঘন ঘন প্রস্রাব সমস্যার কারণ ও প্রতিকার

 

Urine Urgency / প্রস্রাব ধরে রাখতে সমস্যা / ঘন ঘন প্রসাব  

ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা  কেন হয় ? প্রস্রাবের সমস্যায় করণীয় কি ? Urinary incontinence / Frequent urination

একজন সুস্থ মানুষ দৈনিক ৬-৭ বার পর্যন্ত প্রস্রাব করতে পারে ৷ খুব বেশি পানি খেলে ৮ /৯ বার পর্যন্ত হতে পারে৷ তবে এর বেশি হলে এটাকে ঘন ঘন প্রসাব সমস্যা বলতে পারি৷ সোজা কথা কেউ ২ লিটার পানি খেলে ২৪ ঘন্টার ভিতর ৭/৮  বারের বেশি প্রস্রাব করলে তার শারিরীক কোন সমস্যা আছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে ।  এটাকে আমরা ঘন ঘন প্রস্রাব সমস্যা বলতে পারি । অনেক কারনেই   প্রস্রাবের এই সমস্যা হয়ে থাকে । যেমন  

১.  ইউটিআই ( ইউরিনারি ট্র‍্যাক্ট ইনফেকশন) ঃ শরীরে জ্বর,  আর্জেন্ট  ও ঘন ঘন  প্রস্রাব এবং সাথে তলপেটে ব্যথা এই ধরনের সমস্যা প্রস্রাবের নালীতে ইনফেকশন হয়েছে বুঝায়। 

২. ডায়বেটিসঃ হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে প্রস্রাবের পরিমান বেড়ে যাওয়া এবং  ঘন ঘন প্রস্রাব হলে ডায়বেটিস লক্ষণ বুঝায়। কারণ শরীরের অতিরিক্ত গ্লুকোজ প্রস্রাবের মধ্যে দিয়ে বের হয়৷ 

৩. কোমর ব্যথা ঃ ডিস্ক প্রলাপ্স জনিত কোমর ব্যথার জন্য অনেক সময় প্রস্রাব ধরে রাখতে সমস্যা হয়৷ এইসব সমস্যার ক্ষেত্রে এক সাথে কোমর ব্যথা,  প্রস্রাব ধরে রাখতে সমস্যা এবং সেক্সুয়ালি সমস্যা হয়ে থাকে । 

৩.  প্রোস্টেট বড় হয়ে যাওয়া ছেলেদের প্রোস্টেট গ্লান্ড বড় হয়ে গেলে এটা ইউরিথ্রাতে চাপ দেয়৷ ইউরেথ্রা হল একটা নালী যেটা প্রস্রাবের থলি থেকে পেনিস পর্যন্ত আসছে ।  তাই ইউথ্রেরাতে চাপ দিলে  প্রস্রাবের থলি ( ইউরিনারী ব্লাডার) সংকুচিত হয়ে যায়।  ফলে অল্প প্রস্রাব জমা হলেও প্রস্রাব বের হয়ে যায়। 

৪৷ প্রেগন্যান্সি গর্ভবতী মায়েদের ইউটেরাস যত বাড়তে থাকে ততই প্রস্রাবের থলি ব্লাডারে তত চাপ পরে৷ ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়৷ 

৫. প্রস্রাবের ওষুধঃ ডাই ইউরেটিকিস জাতীয়ে প্রেসারের ওষুধ খেলেও ঘন ঘন পেশাব হতে পারে৷ 

৬।  নিউরোলজিকাল সমস্যাঃ স্ট্রোক, স্পাইনাল কর্ড  ইনজুরি সহ আরো কিছু  নিউরোলজিকাল সমস্যায় নার্ভে ডেমেজ হয়ে যায়৷ এইসব ক্ষেত্রে ঘন ঘন প্রস্রাব এবং প্রস্রাব আর্জেন্সি তৈতি  হয়৷ 

ডায়াগনোসিস ঃ

 ঘন ঘন প্রসাব এর এক্সক্স সঠিক কারন নির্নয়ের জন্য   রোগীর সব কথা শোনা এবং  ফিজিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। 

বিশেষ করে – কোন ওষুধ খাচ্ছেন কিনা । ঘন ঘন প্রস্রাব সমস্যার সাথে অন্য কোন সমস্যা যেমন  জ্বর বা ব্যথা আছে কিনা ?  ঘন ঘন প্রসাবের সমস্যাটা কি আপনি রাতে বা দিনে কখন বেশি হচ্ছে। 

আপনি আগের চেয়ে বেশি পানি খাচ্ছেন কি ? প্রস্রাবের রং কি কোন পরিবর্তন হচ্ছে ; 

আপনি অতিরিক্ত কফি বা কোন অ্যালকোহল খাচ্ছেন কি! 

এছাড়া ডায়াগনোসিস কনফার্ম হওয়ার জন্য রক্ত পরীক্ষা, ইউরিন পরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাফিও বেশ কিছু পরীক্ষা লাগতে পারে৷ 

 

ঘন ঘন প্রসাব থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়

ডায়বেটিস থাকলে ডায়বেটিস কন্ট্রোল করতে হবে৷ ইনফেকশন থাকলে ফিজিশিয়ানের পরামর্শমত ওষুধ খেতে হবে৷  ঘন ঘন প্রস্রাব ঘরোয়া উপায়ে নিয়ন্ত্রন করতে চাইলে  নিচের নিয়মগুলো অবশ্যই ফলো করতে হবে৷ 

১. ইউরিনারী ব্লাডারকে পুনরায় ট্রেনিং করাতে হবে৷ অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময় বিরতি দিয়ে প্রতিদিন একই সময় প্রস্রাব করতে হয়৷ এতে ব্লাডার ( প্রস্রাবের থলি)  অনেকক্ষন প্রস্রাব ধরে রাখতে শিখে৷ ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা দূর হয়। 

২.  খাদ্যাভ্যাসঃ  যেইসব খাবার খেলে প্রস্রাব ধরে রাখতে সমস্যা হয় যেমন চা,  কফি, চকলেট পরিহার করতে হবে৷ 

৩. যথেষ্ট পরিমান পানি খেতে হবে৷ তবে রাতে ঘুমানোর আগে পানি খাবেন না,যাদের এই সমস্যা তাদের জন্য৷ 

৪. ডিস্ক প্রলাপস  জনিত কোমর ব্যথার ক্ষেত্রে আগে ডিস্ক প্রলাপ্সের সমস্যার সমাধান করতে হবে ৷ কোমর ব্যথার ক্ষেত্রে  প্রস্রাব ধরে রাখতে একবারে ব্যর্থ হলে,  অবশ্যই নিউরোসার্জনের সাথে সাথে এপয়েনম্যান্ট নিতে হবে। 

৪. কিগল এক্সারসাইজঃ প্রস্রাবের থলি এবং প্রস্রাবের নালির (ইউরিথ্রা) চারদিকে পেলভিক ফ্লোর মাসল থাকে৷ এই  মাসল গুলোকে শক্তিশালী করতে হবে ৷ তাহলে ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা থাকবে না৷ 

আপনি খুব সহজে এই এক্সারসাইজগুলো করতে পারেন৷ পায়ু পথ দিয়ে গ্যাস বের হওয়ার সময় আপনি যদি ধরে রাখতে চান সেটাই হল কন্ট্রাক বা সংকোচন,  আবার গ্যাস ছেড়ে দেওয়ার সময় যে অবস্থা হয় সেটা হল রিলাক্স বা প্রসারন। 

অন্যভাবে বলা যায় আপনি কল্পনা করুন আপনার প্রস্রাব আসতেছে কিন্তু আপনি ধরে রাখার চেষ্টা করতেছেন যাতে প্রস্রাব না আসে এটাই হল পেলভিক মাসল কন্ট্রাক বা সংকোচন ;  আবার প্রস্রাব করার সময় যেই অবস্থা হয় সেটা হল রিলাক্স বা প্রসারন ৷  

এইভাবে ৫ সেকেন্ড  ধরে পেলিভক মাসলকে শক্ত করে ধরে রাখবেন৷ আবার ৫ সেকেন্ড সময় পর ছেড়ে দিবেন (প্রসারিত করবেন বা রিলাক্স করবেন)৷ এইভাবে ১০ বার করলে ১ সেট হবে৷ দিনে ৩/৫ সেট করবেন৷ আপনি শুয়ে বসে বা দাঁড়িয়ে যেকোন সময় এই এক্সারসাইজ টা করতে পারেন ৷  তবে এই এক্সারসাইজটা প্রস্রাব করার সময় মাঝপথে প্রস্রাব আটকিয়ে এক্সারসাইজ করবেন না । এতে করে প্রস্রাবের প্রবাহ উল্টোদিকে যেতে পারে ।  

ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যায় বা সেক্সূয়াল সমস্যায় কিগল  এক্সারসাইজটি ভাল করতে নিচের ভিডিওটি দেখুন বা এখানে ক্লিক করুন 

 

Related Link:

প্রস্রাবের সমস্যায় বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস দেখতে ভিজিট করতে পারেন  Techno Health 

অথবা  কিগল স্টিমুলেটর 

 

ধন্যবাদ
ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ) , এমপিটি ( ইন্ডিয়া ) 
প্রতিষ্ঠাতা, ভিশন পেলভিক কেয়া
প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান,  ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার
উত্তরা, ঢাকা ।
অ্যাপয়েন্টম্যান্ট ঃ  01932797229
ফেইসবুক প্রোফাইল দেখুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top