কোমর ব্যথার কারণ কি , কোমর ব্যথা কেন হয় , কোমর ব্যথার সঠিক চিকিৎসা নিয়ে আমাদের মাঝে হতাশার শেষ নেই । বিশেষত পিএলআইডি/ PLID জনিত কোমর ব্যথা নিয়েই আমরা বেশি ভুক্তভোগী । ডিস্ক প্রলাপ্স / পিএলআইডি রোগ কি , কেন পিএলআইডি হয় বা পিএলআইডি রোগের চিকিৎসা কিভাবে করব , এইসব বিষয়ে বিস্তারিত এই আর্টিকেলে আলোচনা করব ।
পিএলআইডি /PLID রোগ কি ?
PLID মানে Prolapse Lumbar Intervertebral Disc. অর্থাৎ আমাদের পিঠ বা কোমর অনেকগুলো ছোট ছোট হাড় নিয়ে গঠিত, যাকে আমরা কশেরুকা বা ভাট্রিবা বলি । এই ভাট্রিবাগুলোর মাঝখানে একধরনের কার্টিলেজ থাকে, যাকে আমরা ইন্টারভাট্রিবাল ডিস্ক বলি।
অনেক সময় বিভিন্ন কারনে বিশেষ করে আঘাতজনিত কারনে কিংবা হাড়ের ক্ষয় বৃদ্ধি জনিত কারনে এই ইন্টারভাট্রিবাল ডিস্ক বের হয়ে এসে নার্ভে চাপ দেয়। ফলে কোমরে অনেক ব্যথা হয়, অনেক সময় এই ব্যথা পায়ের থোড়ার নিচ পর্যন্ত চলে যায় । পা ঝিন ঝিন করে, অবশ অবশ লাগে ।
পিএলআইডি রোগের লক্ষন কি ?
পিএল আইডি বা ডিস্ক প্রলাপ্স রোগের প্রথম লক্ষন হল প্রচন্ড কোমর ব্যথা । কোমর থেকে পা পর্যন্ত ব্যথা । পা ঝিন ঝিন বা অবশ অবশ হতে পারে ।
অনেক সময় এই ব্যথা কোমরে না থেকে সরাসরি পায়ে চলে যায় । সিরিয়াস ক্ষেত্রে প্রস্রাব বা পায়খানা ধরে রাখতে সমস্যা হয় । পায়ের আঙ্গুল বা পাতা নড়ানো যাচ্ছে না , পায়ের আঙ্গুল বা পাতার দিকে অনুভূতি কমে গেছে । মাঝে মাঝে দেখা যায় অনেক রোগীর কোমর বাঁকা হয়ে যেকোন একদিকে সরে গেছে , মেডিকেল ভাষায় বলি কোমর একদিকে shift হয়ে গেছে । ডিস্ক প্রলাপ্স এর প্রথমদিকে হয়তো অনেক খারাপ অবস্থা দেখা যায় , বিছানায় শুয়ে থাকতে হয় । কোনভাবেই নড়াচড়া করা যায় না ।
পিএলআইডি রোগের ডায়াগনোসিস কিভাবে করা হয়
প্রথমত রোগীর সব কথা শুনতে হয় – ব্যথা কখন কোথায় , কিভাবে শুরু হল, ব্যথা কখন বাড়ে , কখন কমে কিংবা সামনে ঝুঁকে ভারী কিছু তোলার ইতিহাস আছে কিনা সব জানতে হয় । ফিজিক্যালি এসেস করতে হয় বিশেষ করে কোমর বাঁকা আছে কিনা , নার্ভে চাপ লেগে আছে কিনা , মাসল স্পাজম আছে কিনা , মটর , সেনসরি , রিফ্লেক্স সব দেখতে হয় ।
এছাড়া প্রয়োজনে এক্সরে , এমআরআই , বিভিন্ন ধরনের রক্ত পরীক্ষা ,আর্থ্রাইটিসের পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হয় ।
পিএলআইডি রোগের চিকিৎসা বা ডিস্ক প্রলাপ্স জনিত কোমর ব্যথার চিকিৎসা
প্রথমত ব্যথা সাময়িকভাবে কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যথার ওষুধ খাওয়া যেতে পারে , তবে ব্যথার ওষুধের বিকল্প হিসেবে অনেক ধরনের ফিজিওথেরাপি মডালিটিস , ম্যানুয়াল টেকনিক আছে যেইগুলো দিলে সাথে সাথে ব্যথা কমানো যায় । তবে শুধু ব্যথার ওষুধ আর রেস্ট না নিয়ে স্পেসিফিকভাবে চিকিৎসা নেওয়া উচিত ।
পিএলআইডি সমস্যায় অনেক সময় কোমর বাঁকা ( shift) হয়ে যায়। তবে এই বাঁকা কোমর সোজা না হলে অর্থাৎ শিফট কারেকশন না হলে ব্যথা ভাল হবে না।। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট বিভিন্ন ধরনের ম্যানুয়াল টেকনিক এবং রোগীর পজিশন কারেক্ট করে বাকা কোমর খুব সহজে সোজা করে ঠিক করে থাকেন ।
কোমর ব্যথার জন্য সারাবিশ্বে জনপ্রিয় চিকিৎসা হল ফিজিওথেরাপি । পিএলআইডি রোগের চিকিৎসা হিসেবে অনেকেই হঠাৎ করেই সার্জারির মত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নে একটা নিয়ম আছে, কোমর ব্যথার সার্জারির আগে অবশ্যই একজন মাস্কুলোস্কেলেটাল বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টদের লিখিত অনুমতি নিতে হয়। অর্থাৎ উনি এসেসমেন্ট বা ফিজিওথেরাপি দিয়ে দেখছেন, রোগী ফিজিওথেরাপি দিয়ে ভাল হবে না। সার্জন তখন চিন্তা করবে, তার সার্জারি লাগবে কি না।
আমি মনে করি আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও পিএলআইডি রোগের সার্জারির করার আগে অবশ্যই একাধিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে লিখিত পরামর্শ নিন। PLID পিএলআইডি সমস্যা শুরু দিকে হলে , সেই ক্ষেত্রে মাইক্রো কারেন্ট থেরাপি অনেক উপকারি । ডিস্ক প্রলাপ্স এর ব্যথা এক সপ্তাহের মধ্যেই ভাল করা সম্ভব । ক্রনিক ব্যথার ক্ষেত্রের ম্যানুপুলেশন , ড্রাই নিডল , আকুপাংচার , শকওয়েভ থেরাপি অনেক উপকারী । সঠিকেভাবে চিকিৎসা দিলে ২-৩ সপ্তাহে পিএল আইডি সমস্যা অপারেশন ছাড়াই ভাল হয়ে যায় । তাই পিএলআইডি রোগের চিকিৎসা নিয়ে অযথা টেনশনের করার মানে হয় না । সঠিক চিকিৎসা নিন, সুস্থ হোন ।
পিএলআইডি জনিত কোমর ব্যথা প্রতিরোধ করবেন
১। বেশিক্ষন সামনে ঝুকে কাজ করবেন না।
২। ভারী কোন কিছু একা একা নিচ থেকে তুলতে যাবেন না ।
৩। ধূমপান থেকে দূরে থাকবেন ।
৪ । নিয়মিত ব্যায়াম করবেন। ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
৫। ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখবেন ।
ধন্যবাদ
বিপিটি ( ঢাবি) , এমপিটি ( অর্থোপেডিক) – ইন্ডিয়া ।
প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান
পেইন কিউর পেইন ক্লিনিক
পেইন কিউর ফিজিওথেরাপি সেন্টার, উত্তরা , ঢাকা ।
অপ্যায়েন্টম্যান্ট +৮৮০১৭৭৪৬৭৮৬০৪

Consultant Physiotherapist
BPT (DU), MPT (Ortho)
PGC in Acupuncture (India)
Specially Trained in Ozone Therapy


Pingback: কিডনি ব্যথা দূর করার উপায় - Dr Saiful Islam কিডনি ব্যথা কেন হয়
Pingback: কিডনি ব্যথা দূর করার উপায় - Dr Saiful Islam কিডনি ব্যথা কেন হয়